করোনার এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবেন যে ১২ টি উপায়ে:
করোনার এই সময়ে শরীর ঠিক রাখতে দরকার প্রয়োজনীয় পুষ্টি। শরীরকে করোনা সহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত করতে এই মুহূর্তে বেশ কিছু বিষয় জানা জরুরি। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো।
১) খাবারে অতিরিক্ত চিনি পরিহার করুন:
যেসব কোষ শরীরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম, চিনি তাদের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় । এ কারণে খাবারে অতিরিক্ত চিনি খাবেন না। কোমল পানীয় খাওয়া বন্ধ করুন, এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এর বদলে চা, চিনি ছাড়া ফলের রস এবং সাধারণ পানি খেয়ে তৃপ্তি মেটান। এতে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন পাবে, তেমনি শরীর থাকবে ভেতর থেকে পরিষ্কার।
২) স্ট্রেস না নেয়া:
যদিও স্ট্রেস জীবনেরই অংশ। কিন্তু এই স্ট্রেস যদি আপনাকে অসুস্থ করে ফেলে তাহলে বিপদ। খুব বেশি স্ট্রেসের মাঝে থাকলে মানুষ ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর এমনকি আরও বড় অসুখ হতে পারে। ক্রমাগত স্ট্রেস নিতে থাকলে শরীর কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনে ভরে যায়, যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। স্ট্রেস বেশি নেবেন না, ধ্যান করুন, বুক ভরে শ্বাস নিন এবং যে সব কাজ আপনার স্ট্রেস বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদেরকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলুন।
৩) ভিটামিন বি১২ যুক্ত খাবার খান:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে ভিটামিন বি১২ দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ও ডিমে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। তবে যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাব পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সম্পূরক নিতে পারেন।
৪) জিংক যুক্ত খাবার খান:
শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি হলে রক্তে শ্বেতকণিকার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বাদাম, শিম, দুগ্ধজাত পণ্যে জিঙ্কের পরিমাণ বেশি থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে জিঙ্কের পরিমাণ কমে গেলে তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
৫) ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর। ভিটামিন সি মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট।ভিটামিন সি-ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হৃদ্রোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এই ভিটামিন পরিচিত ফল এবং বিভিন্ন শাকসবজি যেমন: আমলকী, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন সি জমা করে রাখতে পারে না, তাই প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।।প্রতিবেলায় লাবু ভাতের সাথে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৬) খাদ্যতালিকায় রাখুন বিভিন্ন প্রকার সবজি:
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকোলি এসব সবজি মূলত আমাদের যকৃৎ ভালো রাখতে সাহায্য করে। সুস্থ যকৃৎ শরীরের ভিতরে থাকা বিষাক্ত পদার্থকে বের করে দেয়। এ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এসব কপি খেয়ে যকৃৎ সুস্থ রাখাটা খুবই জরুরী। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সব তাজা শাঁখ সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাজা সবজি খান কিন্তু ফ্রিজে এক সপ্তাহ রেখে খাদ্যগুণ কমানো সবজি নয়। যতটা সম্ভব তাজা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য খুব এ দরকার।
৭) দুগ্ধজাত খাবার খান:
দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়েটিকস হিসেবে পরিচিত। যেমন: দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি।মানুষের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, সেটার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়।পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন সেখানে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।দুগ্ধজাত খাবারগুলোর পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডি এর জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সাথে সম্পৃক্ত।যাদের শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোন ঘাটতি থাকে না, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৮) শরীর সচল রাখুন:
সারা দিন ডেস্কে বসে কাজ করলে অথবা অলসতা করে শরীর অচল করে বসে থাকাটা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে ফেলতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। শরীর সচল থাকলে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে করে এবং শরীরে লিউকোসাইট এর পরিমাণ বাড়ায়।লিউকোসাইট হলো রোধ প্রতিরোধের এক ধরণের কোষ।প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন,বাচ্চাদের সাথে খেলা করুন। এতে শরীর সুস্থ থাকবে।
৯) ঘুমান আরাম করে:
ক্লান্তি থেকে শরীরে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়। শুধু তাই নয়, স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধির কারণে ইনসমনিয়াও হতে পারে।প্রতি রাতে সময়মত ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমান, এতে করে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে।
১০) ওজন ঠিক রাখা:
বেশি ওজন যেমন খারাপ তেমনি খুব কম ওজনও কিন্তু খারাপ। নিজের শরীরের গঠন অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর একটি ওজন বজায় রাখুন সঠিক খাদ্যভ্যাস, ব্যায়াম এবং স্ট্রেসমুক্ত জীবনযাপনের মাধ্যমে।
১১) প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যে থাকুন:
পরিবারের মানুষ এবং বন্ধুদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে তা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে- এটা পরীক্ষিত সত্য। একাকী থাকেন যারা, তাদের চাইতে বন্ধুদের মাঝে থাকা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয় শক্তিশালী।
১২) মনকে সুস্থ রাখুন:
মন সুস্থ রাখুন, শান্ত রাখুন, শরীর নিজেই নিজেকে সারিয়ে তোলার শক্তি পাবে। এর জন্য ধ্যান করতে পারেন। শুধুহ তাই নয়, নিয়মিত প্রাণ খুলে হাসার অভ্যাসটাও আপনার উপকারে আসবে। এতে আপনার শরীর ধরে নেয় আপনি সুখি, এবং তাতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ভালো থাকে।
তথ্যসূত্র: টিএনএন, প্রিয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন